আব্দুল্লাহ আল মাহমুদঃ
ঐতিহাসিকভাবে, লাইব্রেরির কাজ ছিল তথ্য নিয়ে এবং লাইব্রেরিয়ানরা ছিলেন সেই সব তথ্যের রক্ষক। কিন্তু এখন সময়ের পরিবর্তন হয়েছে এবং তথ্যে প্রবেশের মাধ্যমে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ডিজিটাল যুগের আবির্ভাবে তথ্য ও জ্ঞানে প্রবেশ আরও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।
লাইব্রেরির কর্মপরিধিতে পরিবর্তনের সাথে সাথে লাইব্রেরিয়ানদের ভূমিকাতেও এসেছে পরিবর্তন। বর্তমানে লাইব্রেরিয়ানরা চেনা গণ্ডি পেরিয়ে নিজেকে সমাজ কর্মী, শিক্ষক, কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর এবং এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার হিসেবেও পরিচিত করে তুলছেন।
লাইব্রেরিয়ানদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ
ডিজিটাল রূপান্তর এবং ভোক্তাদের প্রত্যাশার পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে এবং লাইব্রেরিও এর ব্যতিক্রম নয়। লাইব্রেরিয়ানদের কাজের পরিধি এখন তাদের গতানুগতিক কাজের পরিধির বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে।
লাইব্রেরিগুলো অনেকের জন্য সামাজিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করছে, বিশেষত যারা সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভুগছেন। ২০২০ এবং ২০২১ এর লকডাউনের সময় যখন লাইব্রেরিগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তখনও কিছু লাইব্রেরিয়ান তাদের জায়গা থেকে বিকল্প উপায়ে পাঠক সেবা দিয়ে গেছেন।
তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই সময় ভুয়া খবর বা ভুল তথ্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতার সময় এই সমস্যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই মিডিয়া লিটারেসির মতো বিষয়গুলো এখন আরও যৌক্তিক হয়ে উঠেছে। আর এখানেই লাইব্রেরিয়ানদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আগামীকালের লাইব্রেরিয়ান নেতৃত্ব
অন্যান্য ডিসিপ্লিনের মতোই লাইব্রেরি সায়েন্স প্রোগ্রামগুলোও কোন পেশাগত নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ প্রদান করে না। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যে কোন পেশারই অবিচ্ছেদ্য হওয়া উচিত, যাতে পেশাজীবীরা আগামীদিনের পেশাগত পরিবর্তন এবং চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে নিজেকে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারেন।
যদিও লাইব্রেরি পেশাটির পরিবর্তন হয়েছে বা হচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতিতে তবুও পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন (এএলএ) কিছু লাইব্রেরিয়ান-সংশ্লিষ্ট নেতৃত্ব বিষয়ক কোর্স দেওয়া শুরু করেছে।
প্রিন্সটন পাবলিক লাইব্রেরিতে পরিচালক লেসলি বার্গার লাইব্রেরি কাঠামোর আমূল পরিবর্তন এনে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি লাইব্রেরিতে একটি কফি শপ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কর্মসূচীর আয়োজন করেন। এছাড়া ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন লাইব্রেরিটি সারারাত খোলা হয়েছিল এবং সেই সাথে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক দ্বারা পরিচালিত একটি নির্বাচনী আলোচনার ব্যবস্থাও করা হয়।
বাল্টিমোরের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত শেরিডান লাইব্রেরি আমলাতন্ত্রের পরিবর্তে উদ্যোক্তা সংস্কৃতির প্রচার করার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। সমস্ত স্তরের কর্মচারীদেরকে অর্থ-উৎপাদনকারী প্রকল্পগুলির জন্য তাদের ধারণা জমা দিতে উত্সাহিত করা হয় এবং বেছে নেওয়া প্রকল্পগুলির জন্য অর্থ প্রদান করা হয়।
কিছু লাইব্রেরি তার কমিউনিটির স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভূমিকাকে পালন করেছে। যুক্তরাজ্যে লাইব্রেরিগুলি বিচ্ছিন্নতা এবং একাকীত্বের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারা এমন প্রোগ্রাম চালু করছে যা বয়স্ক পৃষ্ঠপোষকদের একত্রিত করছে এবং শিশুদের সাক্ষরতা প্রচার করার সময় পিতামাতাদের মধ্যে সামাজিক সংযোগ তৈরি করছে। কিছু লাইব্রেরি এমনকি পাবলিক লিভিং রুম এবং উন্মুক্ত সামাজিক স্থান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে।
একুশ শতকের লাইব্রেরিঃ একটি পরিবর্তিত প্রতিষ্ঠান
আমরা যে বিশ্বের মধ্যে বাস করছি তার প্রতিটি দিকই ইন্টারনেটের দ্বারা কম-বেশি প্রভাবিত হয়েছে এবং তথ্যের উন্মুক্ত আদান-প্রদান সহজতর হয়েছে। লাইব্রেরিয়ানরা যদি এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হন তাহলে তাহলে একেকটি লাইব্রেরি হয়ে উঠবে সামাজিক সংযোগ, শিক্ষা এবং পরিবর্তনের কেন্দ্রস্থল।
এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সহজতর নয় তবে এটা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু লাইব্রেরিগুলো একবার এই পরিবর্তিত চ্যালেঞ্জের সাথে মানিয়ে নিতে পারলে এই পেশার ক্ষেত্র, ব্যাপকতা এবং প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
সূত্রঃ প্রেস রিডার ব্লগ
গ্রাফিক্সঃ ফ্রি পিক