“গুটেনবার্গ বাইবেল” পৃথিবীতে অদ্ভুতভাবে ছাপা হওয়া এক বাইবেল; যার কোন দাম নির্ধারণ সম্ভব নয়। এগুলো মহামূল্যবান। গুটেনবার্গের পুরো নাম জোহানেস গেন্সফ্লেইশ জ্যর ল্যাডেন জুম গুটেনবার্গ। ইয়োহানেস গুটেনবের্গ (Johannes Gutenberg)। তিনি জার্মানির মাইন্ৎস শহরে ১৩৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৩৯৮ সালে (আনুমানিক) সর্বপ্রথম এই বাইবেল মুদ্রাক্ষরে ছাপান। পেশায় তিনি ছিলেন একজন জার্মান কামার, কিন্তু তিনি খ্যাতি পান অদ্ভুত ছাপার কৌশল, কালি, দক্ষতার উদ্ভব ঘটিয়ে। কে, কিভাবে, কখন, কি এবং কেন?
ইতিহাস থেকে জানা যায় গুটেনবার্গ- এর জীবন ছিল রহস্যময়। ধাতু সম্পর্কে তার ধারনা ছিল অসাধারন। তিনি ছাপার পদ্ধতি উদ্ভব করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে কবিতা ছাপিয়ে কিছু গ্রাহককে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন সময় তখন ১৪৩৯-১৪৫০ সালের মধ্যে। তিনি কবে বাইবেলেরকাজ শুরু করেন সেটি জানা যায় না তবে সেটা সম্ভবত ১৪৫০ সালের পরেই।
“গুটেনবার্গ বাইবেল” সাধারনত ৪২ লাইন বাইবেল বা মারজারিন বাইবেল বা বি৪২ নামে পরিচিত যা ল্যাটিন ভাষায় রচিত। এটি ৪২ লাইনের বাইবেল অবশ্যই। গুটেনবার্গ ঠিক কতটি বাইবেল ছাপিয়েছিলেন সেটা সঠিক না জানা গেলেও ধারনা করা হয় ১৮০ টি যার মাত্র ৪৯ টির অস্তিত্ব পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে ২১ সম্পূর্ণ। এগুলো অনেক নিরাপত্তার বেষ্টনীর ভেতর রাখা হয়েছে। কেন এরকম হয়েছে সেটার কারণ একটু পরেই আসছে। গুটেনবার্গ প্রথম ১৪৫৪-১৪৫৫ সালে প্রথম বাইবেল প্রকাশ করেন। যেটি ছাপাতে প্রায় ৩-৫ বছর লেগেছিল, এবং সবগুগুলোর কাজই এভাবে সম্পূর্ণহাতে এত সময় ধরে তৈরি করা হয়েছিল। এর অদ্ভুত বিষয়টি হল ছাপার কালি এবং ছাপার ধরন। এর কালিটি হল ধাতব যাতে প্রাথমিকভাবে কার্বন থাকলেও এতে দেয়া হয় কপার, লেড ও টাইটেনিয়াম। ড. ক্রিস্টেনের মতে, এটি এক ধরনের ধাতব বার্নিশ। এর উপর কোন কলম দিয়ে লেখাতো দূরের কথা বরং সেটি পিছলে বেরিয়ে যায়।
ছাপার এই পদ্ধতির নাম “Moveable Printing” যার কারণে এটি বিখ্যাত। একটি লোহার ম্যাট্রিক্স ব্যবহারকরা হত যার সাথে একটি চৌকো নল যুক্ত থাকত। এর মধ্যে গলিত ধাতু ঢেলে অক্ষরের ছাঁচ বানানো হত এবং এগুলো অস্বাভাবিক ছোট এবং নিখুঁত ছিল। ছোট ও বড় হাতের অক্ষরেরজন্য ২৯০ টির সেট প্রয়োজন হত। প্রত্যেক পাতার জন্য ছাঁচগুলোকে সাজানো হত। এর মাধ্যমে ধাতব কালি ব্যবহার করে হাতে ছাপান হত। প্রথমবারে ধাতু ব্যবহার করে অক্ষরের আকৃতি তৈরি করে বারবার একই কাজ করা হত বলে, একটি পাতা শেষ করতে একদিন লেগে যেত। আর এর মধ্যে যে নকশা তৈরি করা হয়েছে, এ পর্যন্ত আর কোন বাইবেলে সেটি নেই। এরকম নিখুঁত বাইবেল কোনদিন আর ছাপানো সম্ভব হয়নি। ১৪৬৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।
এই বাইবেল খুঁজে না পাওয়ার কারণ হল এর দাম। একেকটি সম্পূর্ণ বাইবেলের দাম ৩৫ মিলিয়ন ডলার বা ২৭৬১৫০০০০০/- টাকা। একেকটি পাতার দাম ২০০০০-১০০০০০/- ডলার যা নির্ভর করে এর অবস্থার উপর। তাই হারানো কপিগুলো এখনো খোঁজা হচ্ছে এবং যেগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো যাতে খোয়া না যায় তাই নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতর রাখা হয়। ছবিতে যে গুটেনবার্গ বাইবেলটি দেখছেন তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত পৃথিবী বিখ্যাত লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত।
কনক মনিরুল ইসলাম সদস্য, সম্পাদনা পর্ষদ লাইব্রেরিয়ান ভয়েস