খন্দকার আসিফ মাহতাব
আপনি এবং আপনারা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে যাপিত জীবনকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন। কখনও অতি উচ্চতা নিচের দৃষ্টিকে ক্ষীণ করে তোলে আবার একই দৈর্ঘ্যের নিচ থেকে আকাশের বিশালত্বকে ধারণ করা যায়। দৃষ্টির এই ভিন্নতা আপনাকে এবং আমাকে বা আমাদেরকে আলাদা অনুভূতি দিয়ে চলেছে। অনুভূতির এমনই বৈচিত্রতা ভাবিয়ে তুলবে আড়ালের গল্প বইটি।
এই বইমেলায় (২০২২) ‘উপকথা’ প্রকাশনা থেকে ববি লায়লার ১২টি (১টি গল্প আড়ালেই রয়েছে) গল্প নিয়ে প্রকাশ হয়েছে ‘আড়ালের গল্প’। বইটি শুরু করার আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বইটির পাঠক হবেন? পুরুষ? নারী? মানুষ?
ধরুন আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে বই পাঠ করছি। হুম, লেখক প্রচণ্ড পুরুষ বিদ্বেষী, সমাজের বাস্তবতাকে সে থোড়াই কেয়ার করে,
এমনটা ঢের দেখেছি, আরেকজন নারীবাদী লেখক, বড্ড পক্ষপাতদুষ্ট ইত্যাদি ভাবনা আসবে প্রতিটি গল্পের গতিপ্রকৃতি আর চরিত্র পর্যবেক্ষণে।
এবার নারী জাগরণের প্রতিনিধিত্বকারী পাঠকের দৃষ্টি থেকে বই পাঠের চেষ্টা করি। হ্যাঁ, নারীদের কথা রয়েছে, নারী জাগরণের কথা রয়েছে, উৎসাহব্যঞ্জক লেখা, লেখিকা কি বেগম রোকেয়া বা তসলিমা নাজনীন দ্বারা প্রভাবিত?
হতে পারে নারী বা পুরুষের দৃষ্টিতে উপরের কথাগুলো আপনার বা আমার সাথে যায় না। তবে আসুন খাঁটি মানুষের দৃষ্টিতে গল্পগুলো পড়ি। এখানে আপনার কথা আছে। আমার কথাও আছে। আমাদের কন্যা জায়া জননীদের কথা আছে। বইটির গল্পে যে চরিত্রগুলো আছে মানুষের জন্য তাঁরা সার্বজনীন। দেশ ও দেশের বাইরে পৃথিবীর নাগরিকত্ব নিয়ে চরিত্রগুলো বেঁচে আছে। মানবতা ও মননশীলতার অকৃত্রিম উপাদানে ঠাসা শব্দসম্ভারের একটি ছোট প্রসাদ নির্মিত হয়েছে যেন বইটির আকারে।
বইটির গল্পগুলো শুধু একঘেঁয়ে বা আটপৌড়ে কথকতার ধারাবাহিকতাই নয় বরং রহস্য, রোমাঞ্চ, নাটকীয়তা এবং হাস্যরসের বিকশিত উপস্থাপনা। লেখকের শব্দ চয়নের রুচিশীলতা পাঠকদের মুগ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস। ছাপাখানার ভূত তাড়ালে পরবর্তী সংস্করণ নিখুঁত হতে বাধ্য।
খন্দকার আসিফ মাহতাব সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, শাহবাগ, ঢাকা।