ভয়েস ডেস্ক
আলো যেমন জাগতিক নিয়মে অন্ধকার দূর করে সব কিছু মূর্ত করে তোলে, তেমনি বই মানুষের মনের ভেতরে জ্ঞানের আলো এনে যাবতীয় অন্ধকারকে দূর করে চেতনার আলোকে সবকিছুকে উদ্ভাসিত করে দেখায়। দেশ কালের সীমানা অতিক্রম করে জ্ঞানের আলোকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে একমাত্র বই।
বই পড়া নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তাদের মাঝে পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশব্যাপী সাইক্লিং এর আয়োজন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল সেন্টার ফর ইনোভেশন এন্ড লার্নিং এবং ওপেন একসেস বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে সাইক্লিস্টরা তেতুলিয়া থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান জেলা শহরগুলোকে অতিক্রম করে টেকনাফে পৌঁছেন।
২৯ সেপ্টেম্বর বিকালে সাইক্লিস্টদের শুভকামনা জানাতে উপস্থিতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক আলী আকবর, ওপেন একসেস বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা কনক মনিরুল ইসলাম, গ্লোবাল সেন্টার ফর ইনোভেশন এন্ড লার্নিং, এর কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার এস এম সাদেক এবং কমিউমিকেশন এন্ড ক্রিয়েটিভ অফিসার সাহেরা নূর প্রমুখ।
এই আয়োজনে সাইক্লিংয়ে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ আমিনুল ইসলাম ফুয়াদ (২০১৮১-১৯ সেশন) এবং সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৩ বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান তাহমিদ (২০১৮-১৯ সেশন)।
পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার এই কর্মসূচির ভেতরে ছিল – বই পড়া বিষয়ে অনুপ্রেরনাদায়ক লিফলেট বিতরণ; স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময়; স্থানীয় লাইব্রেরি ভিজিট, তথ্য সংগ্রহ এবং লাইব্রেরিয়ানদের সাথে মত বিনিময় ইত্যাদি।
বাংলাদেশের সর্বউত্তরের উপজেলা তেতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা’র উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ সাইক্লিং। ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তেতুলিয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে উপজেলা অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে সাইক্লিস্টদের নিরাপদ যাত্রার জন্য শুভকামনা জানান এবং বই পাঠে জনগণকে সচেতন করতে এমন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সাধুবাদ জানান উপজেলা অফিসার।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে দ্বিতীয় দিনে দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে সাইক্লিস্টদের বইপাঠে প্রচারাভিযান চালায় সাইক্লিস্টরা। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে জেলা প্রশাসক এমন মহতি উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পাশাপাশি সাইক্লিস্টদের সাহসি পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। এই দিন সাইক্লিস্টরা প্রায় ১২০ কিলোমিটার সাইক্লিংয়ের পাশাপাশি দিনাজপুরের সাঁওতাল উপজাতি, বায়তুল মদিনাতুল উলুম কিন্ডারগার্টেন এবং হাফেজী মাদ্রাসা, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহ স্থানীয় দোকানপাঠে বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করে প্রচারণা চালান। এসময় তারা স্কুল, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বই পাঠে উৎসাহিত করেন। শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করেন।
কর্মসূচির তৃতীয় দিনে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি থেকে ভোর সাড়ে ৪টায় শুরু করে ১৬০ কিলোমিটারের মতো সাইক্লিং শেষে তারা রাত্রিযাপনের বিরতি নেন সিরাজগঞ্জে। সকাল থেকে সাইক্লিং করার পাশাপাশি বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাগারে প্রচারাভিযান চালান।
পথ চলতে চলতে সোনামুখী দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা, ফুলবাড়ি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, বগুড়ার উডবার্ন সরকারি গণগ্রন্থাগার সহ বিভিন্ন দোকানপাঠে লিফলেট বিতরণ ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তারা৷ কোথাও তারা কথা বলেন শিশুদের দলের সঙ্গে, কোথাও বা স্থানীয় সাইক্লিস্ট গ্রুপ তাদের সাদর অভ্যর্থনা জানান আবার কোথাও গ্রন্থাগার কর্মীরা উষ্ণ অভিবাদনে সিক্ত করেন।
পরদিন সিরাজগঞ্জ থেকে টাঙ্গাইল, সাভার সহ নানা জায়গায় প্রচারাভিযান করে রাতে ঢাকায় বিরতি দেন। এরপর ভোরে বেরিয়ে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কুমিল্লার নানা জায়গায় প্রচারাভিযানে অংশ নেন সাইক্লিস্টরা।
সাইক্লিং করতে করতে তারা কুমিল্লা জেলা গণগ্রন্থাগার ও ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় তারা মহান মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দীন মজুমদার সহ অন্যান্যদের সাথে মতবিনিময় করেন।
এরপর ফেনী থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারে পৌঁছান সাইক্লিস্টরা। এসময় সাইক্লিং করার পাশাপাশি তারা বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করে বিভিন্ন গ্রন্থাগার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নবীন-প্রবীণদের মাঝে লিফলেট বিতরণ ও মতবিনিময় করেন।
৭ অক্টোবর টেকনাফ জিরো পয়েন্টে বিকাল ৪ টায় শেষ হয় দেশব্যাপী এই প্রচারাভিযান।
আয়োজনে নলেজ পার্টনার হিসেবে থাকছে গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের তথ্য ও সংবাদভিত্তিক মাসিক সাময়িকী- লাইব্রেরিয়ান ভয়েস। প্রোগ্রামের মিডিয়া পার্টনারঃ দৈনিক সাহস৷