তিনপ্রজন্মের মহাজন্মের মধ্য দিয়ে বাংলার জনমানসের ও সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান দূরত্বের চিত্র শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় রচিত এই ‘দূরবীন’।
বাংলা সাহিত্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একটু আলাদা ঘরানার লেখক। ‘দূরবীন’ তাঁর শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যকৃতির মধ্যে একটি বলে বিবেচিত। গত শতাব্দীর দুইয়ের দশকের শেষভাগ থেকে শুরু করে আটের দশক পর্যন্ত বিস্তৃত সময়ের প্রেক্ষাপটে সামাজিক জীবনলগ্ন ও যাবতীয় পরিবর্তনকে বিশাল কাহিনী পরিক্রমায় ধরে রাখার প্রয়াসে জোরালো এবং সংবেদনশীল কলমে রচিত এ উপন্যাসটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাহিত্যিক জীবনের অনবদ্য সৃষ্টি।
কোলাজ- শব্দটার সাথে আমরা পরিচিত ক্যামেরায় তোলা ফটোর ক্ষেত্রে। কিন্তু সাহিত্যেও কোলাজ ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের/ চরিত্রের/ ইতিহাসের/ সময়ের ঘটনাশৈলী ফুটিয়ে তোলার এক বহু ব্যবহৃত মাধ্যম। দূরবীন উপন্যাসটিকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ‘কোলাজ-উপন্যাস’ বলা চলে। এই উপন্যাসে তিনটি ভিন্ন প্রজন্মের চরিত্রের মাধ্যমে তিনটি পৃথক সময়ের বর্ণনা ও জীবনাচারের পরিবর্তনকে একই মলাটে নিয়ে এসেছেন লেখক। সমান্তরালে তিন পুরুষের বর্ণিত ঘটনাবলী পাঠকের মনে ফুটিয়ে তোলে ধারাবাহিকভাবে এই প্রজন্মত্রয়ের পরিবর্তন,পার্থক্য। পড়তে পড়তে নিজের সাথে বা নিজের দেখা চারপাশের সাথে, ফেলে আসা সময়, গল্পে শোনা পূর্বপুরুষের জীবনকে যেকোন স্থান থেকেই মেলাতে পারবেন তরুণ ও বর্ষীয়ান পাঠকরা।
দূরবীন তিন প্রজন্মের তিন নায়কের জীবনকে উপজীব্য করে এগিয়ে চলা এক মহা-উপন্যাস। প্রথম প্রজন্মের প্রতিভূ হেমকান্ত, দ্বিতীয় প্রজন্মের নায়ক কৃষ্ণকান্ত আর তৃতীয় প্রজন্মের মূল চরিত্র ধ্রুব। সদা পরিবর্তনশীল সামাজিক এবং তৎকালীন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে এই তিন পুরুষের চমকপ্রদ বিস্তৃত ঘটনাক্রমের মধ্য দিয়ে তুলে ধরার অভিনন্দিত প্রয়াস এই উপন্যাসটি। সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় উপন্যাসটি দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে উপন্যাসটি। ১৯৯০ সালে এ উপন্যাসের জন্য শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লাভ করেন আনন্দ পুরস্কার।
তিনপ্রজন্মের এই মহা-উপন্যাসের প্রথম পুরুষ হলেন হেমকান্ত। উপন্যাসের সূচনা ১৯২৯ সালে। শুরুতে দেখা যায়, কুয়োর বালতি হাত ফসকে পড়ে যাওয়ার তুচ্ছ ঘটনা হেমকান্তের মনে জন্ম দিয়েছে মৃত্যুচিন্তার। এই হেমকান্ত তখন ক্ষয়িষ্ণু জমিদার। হাত ফসকে বালতি পড়ে যাওয়ার ঘটনা তার মনে আবার জাগিয়ে তোলে জীবনের আদি সত্য মৃত্যুর কথা। খামখেয়ালি, ভাবালু, নিবিষ্টমনের দার্শনিক স্বভাবের হেমকান্ত ঠিক রেওয়াজি জমিদার নন।জমিদারের দাপট তার নেই বললেই চলে।
স্বভাবজাত দুর্বল মানসিকতা তাকে আরো পেয়ে বসেছে জমিদারির পড়ন্ত সময়ের জন্যে। সামন্ত রক্ত তার ধমনীতে বহমান ঠিকই -কিন্তু ততটা প্রবল বেগে নয়, যতটা থাকতে হয় একজন ডাকাবুকো জমিদারের। নিখাদ প্রজাবাৎসল্যে পরিপূর্ণ তার মন। বড় ভাইয়ের সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ এবং স্বদেশী ছোট ভাইয়ের অপঘাতে মৃত্যুর বদৌলতে তিনি প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী হন। কিন্তু জমিদারির উৎকর্ষ সাধনে তিনি বেসামাল। সন্তানদের সাথেও বিশেষ বনিবনা নেই বিপত্নীক হেমকান্তের, ব্যতিক্রম কেবল ছেলে কৃষ্ণকান্ত।আর তার দুর্বলতার আরেকটি জায়গা হলো গুপ্তপ্রণয়ী রঙ্গময়ী।হেমকান্তদের পারিবারিক পুরোহিতের কন্যা রঙ্গময়ী প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও বুদ্ধিমতী – যার কাছে হেমকান্ত কেবলই এক শিশু, যাকে সামলে রাখতে হয়, যার মনের কথা অনায়াসে খোলা বইয়ের মতো ঝরঝর করে পড়ে ফেলা যায়। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সংসারের ঝড়-ঝাপটা থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতে চাওয়া হেমকান্তের নির্ভার আশ্রয় রঙ্গময়ী। উপন্যাসের এই প্রজন্মের মূল চরিত্রটির শান্ত ভাবের আড়ালে শক্ত নৈতিকবোধও কিছুস্থানে আলাদা মনোযোগের দাবি রাখে। তার গোপন কিন্তু এক আশ্চর্য শুভ্র প্রণয়কাহিনী ও আনুষঙ্গিক পারিবারিক ঘটনাচিত্র এই উপন্যাসের প্রথমাংশের মূল কাহিনী। এই ঘটনাচিত্র থেকেই ধীরে ধীরে পরিচিত হতে শুরু করে উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিভূ কৃষ্ণকান্ত। কঠিন চরিত্রের, অসামান্য মনোবলের কৃষ্ণকান্তকে লেখক দাঁড় করিয়েছেন হেমকান্তের বিপরীত মেরুতে। চারিত্রিক দৃঢ়তা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠায় বলীয়ান দেবোপম রূপের কৃষ্ণকান্তের ভেতরে নৈতিকবোধটির শেকড় প্রোথিত হয়েছিল কিশোর বয়সেই।
স্বদেশী আন্দোলন, আর একটা বয়স পর্যন্ত নির্মোহ ব্রহ্মচর্য কৃষ্ণকান্তের জীবনকে প্রবাহিত করে ভিন্ন খাতে। জেল-নির্যাতনকে তোয়াক্কা না করে ইস্পাতকঠিন বিপ্লবী কৃষ্ণকান্ত দেশভাগের পর হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। ব্যক্তিত্ব, শান দেয়া মনোবল ও অসামান্য বুদ্ধির জোরে সর্বত্রই তার প্রভাব-প্রতিপত্তি।কিন্তু দেশভাগের পর, রাজনীতিক হিসেবে আত্ম-প্রকাশের পর তার পরিবর্তন ছিল আশ্চর্যান্বিত হওয়ার মতো। এইখানেই উপন্যাসের শেষ পর্বের শুরু। উপন্যাসের শেষ পর্বের গূঢ় কথাও এইখানেই।তৃতীয় ও শেষ পর্বের নায়ক ধ্রুবর জন্য বাবা কৃষ্ণকান্তের ভালোবাসার কমতি নেই, কিন্তু ধ্রুব বাবাকে জ্ঞান করে প্রবল প্রতিপক্ষরূপে। নীতিবান একজন স্বদেশীর সুবিধাবাদী কূটকৌশলী রাজনীতিক চরিত্রে আমূল পরিবর্তিত হওয়াটাকে পুত্র ধ্রুব কোনোদিনই মেনে নিতে পারেনি।
তাই বাবার ক্ষমতাকে প্রতিনিয়ত অপমান করার এক অদ্ভূত প্রতিশোধ নেয়াতেই ধ্রুব ছিল নিমগ্ন। আর পারিবারিক রেওয়াজকে তোয়াক্কা না করা, বাবার ক্ষমতার আবডালে থেকে প্রস্ফুটিত হতে না পেরে তাকে কটাক্ষ করা, কৃষ্ণকান্তের ক্ষমতাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে গিয়ে বারংবার বাবার স্নেহ-ছায়া ও তত্ত্বাবধানের মূলে কুঠারাঘাত হানতে গিয়ে বিশ শতকের ধ্রুব হয়ে দাঁড়ায় উদ্ধত, বেপরোয়া, মদ্যপ, কুসংসর্গী ইত্যাদি হাজার নেতিবাচক বিশেষণের বিদ্রোহী এক দিগভ্রান্ত পুরুষ। ধ্রুবর এই বিদ্বেষ কৃষ্ণকান্তকে আহত করে দারুণভাবে। কিন্তু ধ্রুব অবিচল নিজের ভাবনায়। পিতা কৃষ্ণকান্তের মধ্যে সেই ব্রহ্মচারী মনোভাব ও স্বদেশের জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণসত্তাটিকে খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া ধ্রুবর মনে কেবলই ঘৃণা, কখনো বাবার প্রতি, কখনো নিজের প্রতি। কৃষ্ণকান্তের সকল কিছুতেই তার বিদ্বেষ, তাই পিতার স্নেহধন্যা পুত্রবধু রেমির প্রতিও ধ্রুব অস্বাভাবিক। পতি-প্রীতিতে অবিচল স্ত্রীর প্রতি ধ্রুবর কখনো বিরাগ, কখনো ভালোবাসা, কখনো বা প্রবল উপেক্ষা। এ এক অদ্ভুত সম্পর্ক।
আসলে ধ্রুব চরিত্রটিকে এককথায় প্রকাশ করা কঠিন। তার সঠিক সংজ্ঞায়ন শীর্ষেন্দু নিজেই করে গেছেন।
ধ্রুবর জীবনবীজের মধ্যে সর্বদা যুগপৎ ক্রিয়াশীল দেবত্ব এবং পশুত্ব।তাই লেখক তাকে বিশেষায়িত করেছেন ‘সুন্দর শয়তান’ বলে। দেবত্ব ও পশুত্বের অন্তর্গত যুদ্ধের ঝাপটায় বহুবছরের ক্লান্ত ধ্রুব প্রতিনিয়ত হতে থাকে ক্ষতবিক্ষত।পিতা-পুত্রের মধ্যকার ‘জেনারেশন গ্যাপ’ এবং মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব নিয়েই উপন্যাসের শেষ পর্ব রচিত। সব পর্বেই পিতৃস্নেহের যে রূপ ফুটে উঠেছে তাকে কেবল ‘বিস্ময়কর’ বললে ভুল হবে। এই স্নেহ অনন্তকালব্যাপী বিরাজমান, এই স্নেহ স্বর্গীয়।কৃষ্ণকান্তের প্রতি যেমন তার বাবার অসীম মমত্ববোধ; তেমনি সাহসী কৃষ্ণকান্ত, তার শক্ত কাঠামোর আড়ালে থেকেও শেষতক অপত্য-স্নেহের প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এই অনাবিল অত্যাশ্চর্য স্নেহ ধ্রুবকে বাকি জীবন অপরাধবোধে পুড়িয়েছিল কি না তা জানতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে।
তবে পাঠককে এক বাস্তব দোলাচলে ফেলবে এই উপন্যাসটি। একদিকে আজকের প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ কৃষ্ণকান্ত, অপরদিকে কিশোর থেকে তরুণ হয়ে ওঠা সম্ভাবনাময় বিপ্লবী কৃষ্ণকান্ত। একদিকে ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ অটল কৃষ্ণকান্ত অন্যদিকে ব্রহ্মচারী কিশোর কৃষ্ণকান্তের বেড়ে ওঠা।অতীতের আতশকাঁচ দিয়ে ফেলে আসা সময়কে কাছে দেখতে দেখতে পাঠক ভাববেন তিনি কাকে বেশি ভালোবাসবেন— অতীত, না বর্তমানকে? ধ্রুবর মতোই এই দোলাচল পাঠককেও ভাবাবে।
পুরো উপন্যাসটিতে বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের যে চিত্র শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তুলে ধরেছেন, তার মধ্য দিয়ে সুদূর অতীতের চিন্তন ও মননের এক উজ্জ্বল সুস্পষ্ট রূপ যেমন প্রতিভাত হয় তেমনই আজকের যুগের ধ্রুবর কাহিনী থেকে সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান ব্যবধানের ছবিটিও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এই তিন মূল চরিত্রের বাইরে আরো একটি চরিত্র নিয়ে কিছুটা না বললেই এই লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই তিন চরিত্রের সাথেই যিনি জড়িত দৃঢ়ভাবে, তিনি রঙ্গময়ী।
কিশোর বয়স থেকেই হেমকান্তের প্রতি তিনি আসক্ত; তার প্রগলভ আচরণ হেমকান্তকে বেঁধেছিলো এক অদৃশ্য বাঁধনে। এই প্রগলভতা মূলত রঙ্গময়ীর বলিষ্ঠ চিত্ত-চরিত্রেরই রূপ।এই রূপের কাছেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন হেমকান্ত। সমাজের কূটকথা, কুৎসা আর তীর্যক দৃষ্টিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিছু পাওয়ার আশাকে জলাঞ্জলি দিয়েই হেমকান্তকে ভালোবেসেছিলেন রঙ্গময়ী।
কৃষ্ণকান্তের ভেতর স্বাদেশিকতা আর বিপ্লবের বীজ বুনেছিলেন তিনিই। চিরভ্রান্ত ধ্রুবও কখনো কখনো তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ধর্ণা দিয়েছে রঙ্গময়ীর কাছে। উপন্যাসের সবচেয়ে দৃঢ় পুরুষ চরিত্র যদি হয় কৃষ্ণকান্ত, তবে সবচেয়ে দৃঢ় নারীচরিত্রটি হলো রঙ্গময়ী।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখার দুটো বিশেষ দিক হলো- বহু চরিত্রের সমাগম ও আধ্যাত্মিকতা। এই উপন্যাসেও ঘটনার প্রবহমানতায় লেখক অনেক চরিত্রকে এনেছেন। এতো চরিত্র সমাগমের ভেতরেও উপন্যাসের গতিময়তা ব্যাহত হয়নি কোথাও। প্রতিটি চরিত্র সমকালীন চারপাশ ফুটিয়ে তুলেছে আরো সুন্দরভাবে।
আধ্যাত্মবাদী শীর্ষেন্দুর আধ্যাত্মিক অন্বেষণের চিত্রও এ উপন্যাসে প্রকট। উপন্যাসের বেশ কয়েকটি উজ্জ্বল চরিত্র পথ খুঁজেছে আধ্যাত্মবাদের মাঝে। জীবনের সংকটময় মুহূর্তে ঠাকুর শ্রীঅনুকূলচন্দ্রের কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। এই ঠাকুরের জীবনবাদী দর্শন লেখকের আত্মতত্ত্বের সাথে মিশে দৃষ্টির আলো হয়েছে পুরো উপন্যাস জুড়ে। উপন্যাসটি পড়ার সময় জীবন সম্পর্কে এক অদ্ভুত মায়া পাঠক অনুভব করবেন সবসময়।
কোথাও এক জায়গায় পড়েছিলাম, লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মানুষকে কখনো পুরোপুরি অবিশ্বাস করেননি তার লেখায়, সবসময় ফিরে আসার একটা জায়গা রেখেছেন। দূরবীন উপন্যাসেও এর প্রকাশ আমরা দেখতে পাই ধ্রুব চরিত্রের ক্ষেত্রে।
এই উপন্যাসের গঠনশৈলীর অভিনবত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দ্বিস্তর এই উপন্যাসে সেকালের সাথে একালের প্রাঞ্জল মিশেল ঘটিয়েছেন লেখক। একটি পরিচ্ছেদে বর্তমান এবং পরের পরিচ্ছেদে অতীতের ঘটনা মিশিয়েছেন এক অসাধারণ মুন্সিয়ানায়।
ব্রিটিশ যুগের জমিদার হেমকান্ত, তার পুত্র অগ্নিযুগের বিপ্লবী কৃষ্ণকান্ত ও পৌত্র ধ্রুব- আবহমান বাংলার তিন সময়ের বিশাল আখ্যানের সঙ্গম ঘটেছে এই তিন পুরুষের জীবনযাত্রায়।তবে কেবল তাদের ব্যক্তিগত জীবন নয়; সমকালীন প্রেক্ষাপট ও সামাজিকতায় আরো বিচিত্র ও কৌতূহলকর শাখা-কাহিনী, এবং এর চালচিত্রে স্বদেশী আন্দোলন, দেশভাগ ও স্বাধীনতা পরবর্তী উত্তাল দিনরাত্রির এক তাৎপর্যময় উপস্থাপনার জন্যও ‘দূরবীন’ অতুলনীয়।
উপন্যাসের সমাপ্তি টানা হয়েছে দুটি করুণ ও আকস্মিক ঘটনা দিয়ে। ধ্রুব ও পাঠকের মনের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আচমকাই প্রকাশিত হয়েছে সেখানে।
উপন্যাসের নামকরণের সূক্ষ্মতা শীর্ষেন্দুর রচনারীতির মতোই অদ্বিতীয়। সাহিত্যের কলায় তিনি দেখিয়েছেন, দূরবীনের কাঁচের ভেতর দিয়ে আমরা অতীতের লোকগুলোকে যেমন বড় কাছের করে পাই, দূরবীন ঘোরালে আজকের মানুষগুলোকেও বড় দূরের মনে হয়।
স্পষ্ট সমাজচিত্রায়ণের সাথে পিতা-পুত্রের অপ্রকাশিত অমোঘ ভালোবাসা, সম্পর্কের টানাপোড়েন ও ভালোবাসার নতুন দৃষ্টিকোণের সাথে লেখকের সুচিন্তিত জীবনদর্শনের প্রকাশে ‘দূরবীন’ নিঃসন্দেহে এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি।
ইশরাত মুনীয়া শিক্ষার্থী, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। eshratjahandu@gmail.com