তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বসবাস করছি আমরা। তথ্যের অবাধ প্রবাহ। আমরা যেমন বলছি প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারে এর সীমা নির্ধারণ করা। কারণ প্রযুক্তিকে যথেচ্ছা ব্যবহার করে আমরা এর সুফল ভোগ করতে পারব না। আমরা নিজে ও সমাজকে একটি হুমকীর মুখে ঠেলে দিচ্ছি। ঠিক তেমনিভাবে তথ্যের অবাধ প্রবাহ থেকে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বাছাই করে নেয়াটা ও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তথ্যের অবারিত প্রবাহ থেকে কাঙ্খিত তথ্য খুজে পেতে অনুসরণ করতে হবে কিছু নীতিমালা। তথ্য পাওয়ার জন্য প্রথম. বিভিন্ন সার্চ কৌশল সম্পর্কে জানা। আমি কীভাবে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সঠিক তথ্য খুঁজে পেতে পারি সেটা জানতে হবে। যেমন তথ্য খোঁজার ক্ষেত্রে কোনগুলো তথ্য বাদ দিব, কোন গুলো তথ্য নিব, এর জন্য সার্চ লজিক ব্যবহার করে বৈজ্ঞানিক উপায়ে আমরা তথ্যের অনুসন্ধান করতে পারি। আমরা তথ্য ভিত্তিক সমাজে বাস করি। তথ্যে যারা যত সমৃদ্ধ পদ্ধতিগত উপায়ে তারা তত বেশি এগিয়ে আছে উন্নয়নের পথে। তথ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও বিতরণের মাধ্যমে জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো সম্ভব। গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানের অন্তনির্হিত বিষয় হচ্ছে “সঠিক তথ্যটি সঠিক ব্যবহারকারীর কাছে সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়া” বিশ্বের অনেক উন্নত দেশগুলো এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং শিক্ষার্থীরা যাতে এই বিষয়ে সচেতন থাকে সে জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে।
তথ্যের উৎস জানা। আমরা যে উৎস থেকে খুঁজতে চাই সেটা জানা। তথ্যের নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে জানা, যেটাকে আমরা বলে থাকি ethical use of information. আমরা যে তথ্য নিয়ে কাজ করছি, তার authenticity, accuracy এবং validity এ বিষয়গুলো জানা।
‘একাডেমিক লেখার ক্ষেত্রে কুম্ভিলক বৃত্তি (Plagiarism) এড়িয়ে চলা চাই এবং যে তথ্য ব্যবহার করতে চাই তার উৎস ও রেফারেন্স উদ্বৃতি সঠিকভাবে ব্যবহার করা। একজন গবেষক লেখক ও শিক্ষার্থীদের জানা দরকার।’ লেখার ক্ষেত্রে কুম্বীলক বৃত্তি (Plagiarism) এড়িয়ে চলা, ডুপ্লিকেশন এড়িয়ে চলা। কোন লেখা চুরি ধরার জন্য এখন আর পুরো ডকুমেন্ট পরে খোঁজার দরকার হয় না। শুধু লেখার একটা কপি সফটওয়্যারে দিয়ে দিলে লেখাটি কোথা হতে কপি করা হয়েছে তার উৎস লিংকসহ দেখিয়ে দেয়। বাংলাদেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে Turnitin, Duplichecker, iThenticate উল্লেখযোগ্য।
‘ভাষাগত শুদ্ধির জন্য ইংরেজিতে Grammarly এর ব্যবহার করে থাকে। এর দুটি ভার্সন রয়েছে একটি ফ্রি এবং অন্যটি প্রিমিয়াম। এর মাধ্যমে গ্রামার শুদ্ধি করা যায় এবং লেখার সাথে সাথে লেখার সঠিক রূপ দেখায়। উদ্ধৃতি রেফারেন্স ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার যেমন Mendeley, Zotero এর মাধ্যমে গবেষণা ও প্রবন্ধের রেফারেন্স খুব সহজেই অল্প সময়েই ব্যবস্থা করা যায়।
আমরা যখন কোনো সভা, সেমিনার বা বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত তখন সেখানে উপস্থাপক, প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণার্থী বা দর্শনার্থীর অনুমতি না নিয়ে কোন ছবি, তথ্য, ডকুমেন্ট নেওয়া ঠিক হবে না, এটা নৈতিক একটি বিষয়। ইহা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
আমরা বলছি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (4IR) কথা। যেটার সাথে তথ্যের এক নিগুঢ় সম্পর্ক। আমরা বলছি সমৃদ্ধির কথা, উন্নয়নের কথা আর যেটা আসছে তথ্যের হাত ধরেই। তথ্যের মাধ্যমেই আমরা পেয়েছি এক উন্নয়নশীল সভ্যতার দেখা। অতএব তথ্যের সঠিক ব্যবহার এর মাধ্যমে-বাস্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার, বিদ্যুৎ আবিষ্কার, ইন্টারনেট আবিষ্কার এবং ডিজিটাল বিপ্লব এই সমস্ত বিপ্লব ঘটানোর পেছনে নিগূঢ়ভাবে কাজ করেছে তথ্য। সঠিক তথ্য ও তার যথাযোগ্য ব্যবহার কোন সৃজনশীল কর্মসৃষ্ঠির সঠিক স্বীকৃতি দেয়া, সঠিক উপায়ে তা পরিচালনা করা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের ক্ষেত্রে প্রসঙ্গ, উদ্বৃতি উল্লেখ করা। আমরা নবীন শিক্ষার্থীরা ও নবীন গবেষকরা একুশ শতকের বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রবর্তী সৈনিক। তাদের মাঝে লুকায়িত আছে আগামীর পৃথিবীর নৈতিকতা ও সৌন্দর্য, আর এ জন্য আমাদের শিক্ষার্থীরা তথ্যের সঠিক পদ্ধতিগত ব্যবহার জানবে।
একটি গ্রন্থাগার জ্ঞানপিপাসু চাহিদা মেটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকে। আধুনিক যুগে মানুষের তথ্যের চাহিদা বেড়েছে, জ্ঞান ও জানার পরিধি বেড়েছে। গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রগুলো তাদের সেবার মান ও সেভাবেই অংকন করে চলছে। সুতরাং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে তথ্যের সঠিক ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মোঃ ঈদ-ঈ-আমিন সদস্য, সম্পাদনা পর্ষদ, লাইব্রেরিয়ান ভয়েস