ইংরেজরা নিজেদের দেশে সার্বজনীন গণগ্রন্থাগার আইন করেছিল ১৮৫০ সালে। এই গণগ্রন্থাগারের কাজ ছিল প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত যারা শিক্ষা লাভ করে আর অগ্রসর হতে পারত না, অর্থাৎ যারা আজকের ভাষায় ড্রপআউট, তাদেরকে অধিকতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা। সেজন্য ১৮৫০ সালে ইংল্যান্ডে গণগ্রন্থাগার আইন প্রণীত হয়েছিল। এই আইন প্রনয়ণের পেছনে দুজন সংসদ সদস্য ও একজন গ্রন্থাগারিকের অবদান রয়েছে। সেই গ্রন্থাগারিকের নাম এডওয়ার্ড এডওয়ার্ডস। এই গ্রন্থাগারিক তাঁর প্রথম জীবনে ছিলেন সাধারন একজন রাজমিস্ত্রি। তিনি প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবার পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি। রাজমিস্ত্রির কাজ শিখে রাজমিস্ত্রি হয়েছিলেন। তবে কাজের শেষে প্রতিদিন একটি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়তেন। এমনি করে গ্রন্থাগারের বই পড়ে তিনি উচ্চশিক্ষিত হন এবং আপন প্রতিভায় বৃটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরির সহকারি গ্রন্থাগারিক নিযুক্ত হন। তিনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে গণগ্রন্থাগরের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন। তিনি গণগ্রন্থগারের জন্য জনমত সৃষ্টি করেন। গ্রন্থাগার আইন পাশ করান। আইনে বলা হয় যে প্রতিটি কাউন্টিতে স্থানীয় সরকার স্থানীয়ভাবে কর সংগ্রহ করে গণগ্রন্থাগার স্থাপন ও পরিচালনা করবেন। সেখানে স্থানীয় সরকার যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করেন, তেমনি গণগ্রন্থাগার পরিচালনা করবেন। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার কোনো অর্থ দেবে না, অর্থাৎ গণগ্রন্থাগারকে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর নির্ভর করতে হবে না। সেই আইনই প্রকৃতপক্ষে প্রথম গণগ্রন্থাগার আইন। সেই আইন বলে সে দেশে গণগ্রন্থাগার পরিচালিত হচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে বিলেতে সর্বত্র গণগ্রন্থাগার স্থাপিত ও পরিচালিত হবার কারণে পাঠক যে কোন বই ক্রয় না করে গণগ্রন্থাগার থেকে ধার করে পড়তে পারেন। বইটি কেনার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এর ফলে যখন লেখক মনে করলেন তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, তখন আরেকটি আইন করা হলো যে, গণগ্রন্থাগারে কোনো একটি বই যতবার পঠিত হবে সেই বইয়ের লেখক ততবার একটি নির্ধারিত হারে রয়্যালটি লাভ করবেন। সেই রয়্যালটি করলব্ধ অর্থ হতে পরিশোধ করা হবে। এই আইনের নাম ‘পাবলিক লেন্ডিং রাইট’। এটি ১৯৭৯ সালে ব্রিটেনে পাশ হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৪০ টি দেশে এই আইন প্রণীত হয়েছে। নিজের দেশের পাঠকের জন্য আইন, লেখকের জন্য আইন, দেশের মানুষের উন্নতির জন্য কতো আইন তারা প্রণয়ন করেছে!
নিছক আইন প্রণয়ন করে গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্রিটেনে ১৮৫০ সালে। সেই গণগ্রন্থাগার ব্যবস্থাই বর্তমান যুগের আদর্শ গণগ্রন্থাগার সিস্টেম বা ব্যবস্থা। সে দেশেই গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা নিয়ে অধ্যয়নের বিষয় গড়ে উঠেছিল, তাকে বলা হতো গ্রন্থাগার বিজ্ঞান। বর্তমানকালে তাকে বলা হয় গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান। আমাদের দেশে ১৯৬৯ সালে আন্তর্জাতিক গ্রন্থাগার বিশেষজ্ঞ জে. এস. পার্কার দেশের গণগ্রন্থাগার ব্যবস্থা জরিপ করেন, সেই প্রেক্ষিতে তিনি গ্রন্থাগার আইন পাশ করার প্রস্তাব করেছিলেন। এমনকি আইনের একটি খসড়া তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তথাপি আজ অবধি গ্রন্থাগার আইন প্রনয়ণ করা হয়নি। এর কারণ আমরা জানি না।