Blog

মুজিব বর্ষ ও এসডিজি বাস্তবায়নে গ্রন্থাগারের প্রাসঙ্গিকতা
একটু ভাবুন তো, গ্রন্থাগার ছাড়া কি মুজিব বর্ষ ও এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে? এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কারণ তার আগে আমাদেরকে মুজিব বর্ষ ও এসডিজি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। তাহলে আসুন, প্রথমেই ধারণা নেই মুজিব বর্ষ কি? হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত তার জন্মদিবসের ১০০ বছর উদযাপনই হল মুজিববর্ষ। মুজিববর্ষকে ঘিরে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের।
এবার আসুন, এসডিজি সম্পর্কে জেনে নেই। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হলো ভবিষ্যত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত একগুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রা যার মেয়াদ ২০১৬-২০৩০ সাল পর্যন্ত। এতে মোট সতেরটি লক্ষ্যমাত্রা ও ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দেশে প্রথম গ্রন্থগার দিবস উদযাপন করা হয় ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন – এ দিনটিকে গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ঘোষণার কারণ হল ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় । এ জন্য ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এবার চতুর্থ বারের মত সারাদেশে উদযাপিত হবে গ্রন্থাগার দিবস। বইমেলার মাসে গ্রন্থাগার দিবস হওয়াটা বেশ আনন্দের।
আজকের আলোচনায় মুজিব বর্ষ ও এসডিজি একসাথে বিশ্লেষণের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। কারণ, এসডিজির যে সকল লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেগুলোর সাথে বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের মিল পাওয়া যায়। যেমন, এসডিজি প্রথমেই বলছে দারিদ্র্য বিমোচনের কথা। সর্বত্র সব ধরণের দারিদ্র্য নির্মূল করা । তারপর বলছে ক্ষুধা মুক্তির কথা। জাতির জনক দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেই তিনি বলেছিলেন ” এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেটভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা- বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ এদেশের যুবক চাকরি না পায়”।এবার আসুন, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বিমোচনে গ্রন্থাগার কেমন ভূমিকা রাখতে পারে?
আমরা জানি যে, শহরের তুলনায় গ্রামেই দারিদ্র্যের হার বেশি। সেখানে অভিভাবক তার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ, বই খাতা কিনে দিতে পারে না। এক পর্যায়ে লেখাপড়া বন্ধও হয়ে যায়। কিন্তু আমরা যদি “কমিউনিটি লাইব্রেরি” প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলে এই ঝড়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। প্রতিটি ইউনিয়নে সরকার গ্রন্থাগার স্থাপনের জন্য ব্যবস্থা করতে পারে। সেখানে ছেলেমেয়েরা নানা রকম বই পড়তে পারবে বিনামূল্যে। বই পড়ার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে। ফলে তারা পড়ালেখা ছেড়ে দিবে না। এভাবে তারা শিক্ষিত হতে পারলে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হবে। ফলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে তারা মুক্তি পাবে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ ইংরেজি ছাড়াও আরো ১২টি হিন্দি, উর্দু, ফরাসি, জার্মান, চাইনিজ, আরবি, ফার্সি, স্প্যানিশ, রুশ, ইটালিয়ান, কোরিয়ান ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা হবে৷ বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক ১০০ প্রকাশনা হবে। এ সকল প্রকাশনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ইউনিয়ন বা কমিউনিটি গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই। তাই আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রন্থাগার চাই। বঙ্গবন্ধু কর্নার চাই। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় রয়েছে সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাষণ, সুস্বাস্থ্য ও জলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপের কথা। বঙ্গবন্ধুও ছিলেন পরিবেশ সচেতন। শুধুমাত্র জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বৃক্ষরোপণ যে আমাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য যথেষ্ট না, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা বুঝতে পেরেছিলেন। পরিবেশের পূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা তথা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য দরকার প্রাকৃতিক বন। তাছাড়া আমাদের দেশ সমুদ্র-তীরবর্তী বলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসের জন্য অত্যন্ত জরুরি ব্যবস্থা হলো উপকূলীয় বনাঞ্চল। তিনি সর্বপ্রথম উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়ন শুরু করেন । বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালেই প্রণয়ন করে গেছেন ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন’।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করেছেন যা পরিবেশ সংরক্ষণে আইনগত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা (সংশোধিত) ২০১০, পরিবেশ আদালত আইন ২০১০, বাংলাদেশ পরিবেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৭ ইত্যাদি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এখন প্রশ্ন হল একজন মানুষ এসব আইন সম্পর্কে যদি না জানে তাহলে সে মানবে কি? আর মানুষকে জানানোই তো গ্রন্থাগারিকের কাজ। সুতরাং আমরা বুঝতেই পারছি এখানে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব কতখানি। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এক কোটি গাছের চারা বিতরণ করবে সরকার। বিভিন্ন প্রতিষ্টান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গ্রহণ করা হবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী। এক্ষেত্রে সারাদেশে বিদ্যমান লাইব্রেরিগুলোও এ উদ্যোগে শামিল হতে পারে।
বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ ইংরেজি ছাড়াও আরো ১২টি হিন্দি, উর্দু, ফরাসি, জার্মান, চাইনিজ, আরবি, ফার্সি, স্প্যানিশ, রুশ, ইটালিয়ান, কোরিয়ান ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক ১০০ প্রকাশনা হবে। এ সকল প্রকাশনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ইউনিয়ন বা কমিউনিটি গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই। তাই আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রন্থাগার চাই। বঙ্গবন্ধু কর্নার চাই। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে ‘জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠান’ প্রতিষ্ঠা করেন। ’৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ’ গঠনের আদেশ স্বাক্ষর করেন তিনি। এসডিজির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক এসকল লক্ষ্য বাস্তবায়নে চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত গ্রন্থাগারসমূহ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে । স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ে ঘটে যাওয়া তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে ন্যাশনাল হেলথ লাইব্রেরি অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন সেন্টার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, বারডেম গ্রন্থাগার, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ, দি ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ, দি ইনস্টিটিউট অব চেস্ট রিসার্চ, দি ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেবল ডিজিজেজ, দি ইনস্টিটিউট অব হার্ট রিসার্চ অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেজ এবং অন্যান্য কিছু সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও হাসপাতালের মেডিকেল গ্রন্থাগার। এছাড়া আইসিসিডিআর’বি গ্রন্থাগারে স্বাস্থ্য বিষয়ে রিসার্চ পেপার ও জার্নাল রয়েছে।
তাই জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এসকল লাইব্রেরিগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্যানবেইস গ্রন্থাগার দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তথ্য দিচ্ছে। এ সকল লাইব্রেরি না থাকলে আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য ও পরিসংখ্যান পেতাম না। ব্যান্সডক গ্রন্থাগারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল ডকুমেন্টেশন সেন্টার (ব্যান্সডক) বাংলাদেশের অন্যতম প্রযুক্তিবিষয়ক গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র, যা সার্ক ডকুমেন্টেশন সেন্টার-এর সদস্য। এই সকল গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে আমরা বুঝতে পারি আমরা এসডিজি অর্জনে কতদূর এগুলাম কিংবা আমাদের ঘাটতি কোথায়।
গবেষণা বিষয়ক আরও কিছু গ্রন্থাগারের মধ্য বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, পরিসংখ্যান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, পরিকল্পনা কমিশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমী, শিশু একাডেমী, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একাডেমী, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ইনস্টিটিউট মতো প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার রয়েছে। ব্যানবেইস-এর তথ্য অনুযায়ী এ ধরনের বিশেষ গ্রন্থাগারের সংখ্যা ১,৫০০-এর মতো। এদের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গ্রন্থাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণে বাংলা একাডেমী গ্রন্থাগার বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এগুলো উল্লেখ করার কারণ হল- গবেষণা মান বাড়াতে ও নতুন কিছু উদ্ভাবনে এসকল গ্রন্থাগারের ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।
টেকসই উন্নয়নে সবার অংশদারিত্ব নিশ্চিত করতে গ্রন্থগারের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মন্ত্রণালয়ে বিদ্যমান গ্রন্থগারগুলোতে এমপি, মন্ত্রীরা গবেষণা না করলে দূরদর্শী ও বাস্তব পলিসি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হবেন। প্রায় সকল সরকারি মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং অধিদপ্তরের নিজস্ব গ্রন্থাগার রয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহও তাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাতে গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছে।
গ্রন্থাগার এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে নারী- পুরুষ নির্বিশেষে সবাই পড়তে পারে। তাই বলা যায়, ডিজিটাল ডিভাইড কিংবা বৈষম্য নিরসনে লাইব্রেরির ভূমিকা অনস্বীকার্য। গ্রন্থগারে পাঠকদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকে না। সমতা আনয়নে এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে?
এসডিজিতে রয়েছে ভূমির টেকসই ব্যবহার, সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার, শান্তি ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানের কথা। এক্ষেত্রে বার কাউন্সিল এসোশিয়েশন লাইব্রেরি, সুপ্রিম কোর্ট লাইব্রেরি ও সামরিক ভূমি প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গ্রন্থাগারগুলো ভূমিকা রয়েছে ।
সবার জন্য দীর্ঘমেয়াদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কথা বলছে এসডিজি। এসডিজি বলছে নবায়নযোগ্য ও ব্যয়সাধ্য জ্বালানী কিংবা সাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের কথা। মেরিন একাডেমি লাইব্রেরিতে না গেলে এগুলো সম্পর্কে তথ্য কোথায় পাবেন? যদি আপনি টেকসই নগর ও সম্প্রদায়ের কথা বলেন তবুও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রন্থাগারগুলোতে আসতেই হবে। ব্যাংকাররা বাংলাদেশ ব্যাংক লাইব্রেরিকে বাদ দিয়ে পলিসি নির্ধারণ করতে পারবেন? উন্নয়ন গবেষকরা বিআইডিএস লাইব্রেরি ছাড়া গবেষণা করতে পারবেন? আমাদের অর্থনীতি অনেকটাই কৃষি ও ব্যবসা নির্ভর। তাই বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার জন্য অনেকগুলি গ্রন্থাগার রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে রয়েছে পাঠ্যপুস্তক ও সহায়ক পুস্তকসহ সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা এবং অভিসন্দর্ভ। গ্রন্থাগারটি সিডি-রম, ক্যাবি এবং এগরিস ডাটাবেজ, এ-ভি সামগ্রী এবং যন্ত্রপাতি ও তথ্যসংগ্রহ সেবাও দিয়ে থাকে। এটি বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশস্থ সংরক্ষণমূলক গ্রন্থাগার। এতে ইউএনও (UNO), ইউনেস্কো (UNESCO), ইউনিসেফ (UNICEF), হু (WHO), ইরি (IRRI)-এর বিভিন্ন সংগ্রহ এবং সার্ক দেশসমূহ ও বিশ্বের সর্বত্র থেকে সংগৃহীত কৃষিবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। তাই আমাদের সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তুলতে কৃষি বিষয়ক এসকল তত্থ্য ও উপাত্তে বিশ্লেষণ করা জরুরী।
টেকসই উন্নয়নে সবার অংশদারিত্ব নিশ্চিত করতে গ্রন্থগারের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মন্ত্রণালয়ে বিদ্যমান গ্রন্থগারগুলোতে এমপি, মন্ত্রীরা গবেষণা না করলে দূরদর্শী ও বাস্তব পলিসি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হবেন। প্রায় সকল সরকারি মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং অধিদপ্তরের নিজস্ব গ্রন্থাগার রয়েছে।
স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহও তাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাতে গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছে। সরকারি গ্রন্থাগারসমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ হচ্ছে বাংলাদেশ সচিবালয় লাইব্রেরি। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর গ্রন্থাগারও বেশ সমৃদ্ধ।
এসডিজিতে লিঙ্গ সমতা ও বৈষম্য হ্রাস করণে জোর দিচ্ছে। মুজিব বর্ষেও আমরা বৈষম্যহীন সমাজ দেখতে চাই। সংবিধানেও বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন। বীরাঙ্গনাদের সামাজিক মর্যাদা দিয়ে তাদের পুনর্বাসন করেন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সনে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অধিকাংশ মেয়ের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গ্রন্থাগার এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে নারী- পুরুষ নির্বিশেষে সবাই পড়তে পারে। তাই বলা যায়, ডিজিটাল ডিভাইড কিংবা বৈষম্য নিরসনে লাইব্রেরির ভূমিকা অনস্বীকার্য। গ্রন্থগারে পাঠকদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকে না। সমতা আনয়নে এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে? এসকল খবর কি আমাদের মেয়েরা জানে? এসব জানাতে হলে কমিউনিটি লাইব্রেরি অপরিহার্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। এসকল তথ্য আমাদের মেয়েদের জানাতে হবে। তারা দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করবে।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি আওয়ারের উপর আলাদা নম্বর বন্টনের ব্যবস্থা থাকুক। যাতে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারমুখী হয়। গ্রন্থাগারিকদের শিক্ষক মর্যাদা দিন। তাহলে তারাও পাঠক তৈরিতে ও গ্রন্থাগার সামগ্রীর সুষ্ঠু ব্যবহারে এগিয়ে আসবে।
বাংলাদেশের গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় এখনও অনেক দুর্বলতা বিদ্যমান। নিম্ন গ্রেডে স্যালারি, অভিন্ন বেতন কাঠামো প্রণয়ন না হওয়া ,পদোন্নতির অভাব, গ্রন্থাগার ক্যাডার সার্ভিস চালু না হওয়া, শিক্ষক মর্যাদা না দেওয়াসহ পেশাগত সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি সমস্যা বিদ্যমান।
গ্রন্থাগারকে বলা হয় জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রন্থাগার হল শ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। যুব সমাজ আজ বই পড়ছে না বলে বাংলা ও বাঙ্গালীর সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে না। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানছে না বলেই তারা সহজেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে যায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি আওয়ারের উপর আলাদা নম্বর বন্টনের ব্যবস্থা থাকুক। যাতে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারমুখী হয়। গ্রন্থাগারিকদের শিক্ষক মর্যাদা দিন। তাহলে তারাও পাঠক তৈরিতে ও গ্রন্থাগার সামগ্রীর সুষ্ঠু ব্যবহারে এগিয়ে আসবে। এখন সময় এসেছে চারদিকে বই ছড়িয়ে দেবার। সর্বত্র বই ছড়িয়ে দিতে প্রকাশকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। শুধুমাত্র মুনাফার উদ্দেশ্য না করে লেখক ও পাঠকদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। প্রতিবছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভাষার মাসে বই মেলা হয়। বইমেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে অর্থনীতি। তাই এই প্রকাশনা শিল্পকে বড় করতে হবে। প্রকাশনার মান বাড়াতে হবে।
এতে অনেকের কর্মসংস্থান হবে। আমরা জন্মদিন, বিয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠানে নামি দামি উপহার দিয়ে থাকি। অথচ বইকে শ্রেষ্ঠ উপহার বলা হয়ে থাকে। উপহার হিসেবে বই দিলে পাঁচ সাত বছরেই একটা পারিবারিক গ্রন্থাগার গড়ে তুলা সম্ভব হত । এতে পরিবারের বড় থেকে ছোট সবাই বইপড়ুয়া হত। রাশিয়ার এক গবেষণায় দেখা যায়, রাশিয়ায় বসবাসরত সত্তর শতাংশ পরিবারের ব্যক্তিগত পাঠাগার আছে।
রাশিয়ানরা বিশ্বে বই পড়ুয়া জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। দূরপাল্লার যে কোন ভ্রমণে যেতে তারা বই পড়ে। আমরাও রাশিয়ার মত বই পড়ুয়া জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করতে চাই। ভোরের আলো যেমন রাতে আঁধারকে দূরীভূত করে তেমনি বইয়ের আলোয় আলোকিত হয়ে সামাজিক অনাচার অবক্ষয়কে দূরীভূত করে। আমাদের দেশে সেরকম পাঠক সমাজ আজও উঠেনি । যদিও বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের গ্রন্থাগারের মান উন্নয়ন এবং পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, গণউন্নয়ন গ্রন্থাগার, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি (ল্যাব), বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব লাইব্রেরিয়ান, ইনফরমেশন সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টালিস্ট (বেলিড), বাংলাদেশ গ্রন্থাগার বান্ধব সমিতি, বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার ফেডারেশনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কাজ করছে। বাংলাদেশের গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় এখনও অনেক দুর্বলতা বিদ্যমান। নিম্ন গ্রেডে স্যালারি, অভিন্ন বেতন কাঠামো প্রণয়ন না হওয়া ,পদোন্নতির অভাব, গ্রন্থাগার ক্যাডার সার্ভিস চালু না হওয়া, শিক্ষক মর্যাদা না দেওয়াসহ পেশাগত সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি সমস্যা বিদ্যমান। অথচ গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানের চাহিদা পূরণ করেন গ্রন্থাগারিকরা। আমরা আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা গ্রন্থাগারিকদের দুঃখ বুঝবেন ও পদক্ষেপ নিবেন। আমরা চাই-কোন মানুষই যেন গ্রন্থাগার সুবিধার বাইরে না থাকে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সোনার মানুষ চাই। আলোকিত মানুষ চাই। স্বনির্ভর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই। এসডিজি ও মুজিববর্ষ বাস্তবায়নে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই। তাই স্লোগান হোক “মুজিববর্ষের অঙ্গীকার -ঘরে ঘরে গ্রন্থাগার”।
লেখকঃ শেখ আল- আমিন
- সহকারী গ্রন্থাগারিক
- দৈনিক বণিক বার্তা