Book Review
আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই
আচ্ছা; ভোর হতে আর কত দেরি?
ভোরেই কি আসে জীবনের সুখ?
ভোরেই কি দেখা মিলে হাজার দিনের লালিত স্বপ্ন?
হা, ভোরেই আসছিল।গল্পে রাবেয়ার হারিয়ে যাওয়া স্বামী ফরিদ চরিত্র। রাবিয়া গুটিসুটি মেরে ছোট্ট পাখির মতো ফরিদের বুকে ঢুকে গেল। হাজার অভিমানের ভীরে কোথাও চলে যাওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ রাবেয়ার মনে হল এই মানুষটিকে ছেড়ে সে আর কোথাও যাবে না। কোথাও না ।সে না জাওয়ার গল্পটি কল্পনার তুলিতে এঁকে দেখালেন উদীয়মান লেখক ও কথা সাহিত্যিক সাদাত হোসাইন “আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই” উপন্যাসটিতে। যা খুলে দিতে পারে পাঠকের ভাবনার জগৎ,ছুঁয়ে দিতে পারে মন ও হৃদয়।
লেখক শব্দের পর শব্দ দিয়ে বাস্তব গল্পের মালা গাঁথেন।সে গল্প জুড়ে আছে দুটি পরিবার। রাবেয়া ও নাসিমার পরিবার।নাসিমা ছিলেন বাবার আদুরে মেয়ে। ছিলেন ৫ ভাইয়ের একমাত্র ফোন। নাসিমা কে বিবাহ করেন গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আজহার উদ্দিন। ভালই কাটছিল তাদের দিনগুলি। কত বেড়াজালে আটকে ছিলেন!ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সে সুখ আর স্থায়ী হলো না।দূর থেকে রাজনীতির কলকাঠি নাড়তে থাকা সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী সেই আজহার উদ্দিন; আগাগোড়া এক নেগেটিভ চরিত্রের মানুষ্য রূপ।রূপের আকর্ষণে ক্ষমতার দাপুটে একজন নিম্ন ব্যবসায়ীকে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে তার মেয়ে কে বিবাহ করে। কিন্তু ২২ বছর বয়সী লাবনীর মা নাসিমা ১৮ বছরের সতীনকে জোহরা মেনে নিতে পারলেন না।স্বামীর এই আচরনে নাসিমা ভীষণ কষ্ট পান।
যা ডেকে আনে অশান্তি আর অমোঘ অন্ধকার।নাসিমার বুকে ঝড়ো হয় কষ্টের পাহাড়। মেঘ হয়। কালো অন্ধকার হয় ।অতঃপর নীল (বিষপান করে আত্মহত্যা) হয়ে জীবনের ইতি টানেন।
লেখকের পরিচয় করান গ্রামীণ আরেকটি পরিবারের সাথে। রাবেয়ার পরিবার। যে পরিবার থেকে রাবেয়ার স্বামী ফরিদ কোথায় যেন হারিয়ে যায়। এদিকে তিনটি প্রাণী ( রাবিয়া ও তার শাশুড়ি আর রতন) ফরিদের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। রাবেয়া অস্থির হয়। স্বামীর শোকে শোকাতুর হয়। স্বামীর সাথে অভিমান করে।মনের আবেশে পণ করে ফেলে কোনদিন যদি তার স্বামী আসে সেও হারিয়ে যাবে। কিন্তু ঠিকই একদিন ফরিদ আসে। রাবেয়া অন্য কোথাও যাওয়ার কল্পনা করে কিন্তু ফরিদের ডাক শুনে সে যেতে পারে না। ফরিদের বুকে এসে জায়গা করে নেয়। সে আর কোথাও যায় না। কোথাও না।
লেখক গল্পের ভেলায় ভাসিয়ে আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন; ধনী কিংবা গরীব, গ্রামীণ কিংবা শহূরে সব পরিবারেই একজন নারীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার দৈয়িতের প্রেম, ভালোবাসা।এটাই প্রকৃতি। যত্নশীল প্রেমময় পুরুষ যে তাকে ছায়া দেবে দেবে। যেমনটা বলা হয় –আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো অবয়বহীন /সুর হয়ে লিপ্ত হবো পৃথিবীর সকল আকাশে।
ভাষাচিত্র প্রকাশনী ৮০ পৃষ্ঠার বইতে আরেকটি চরিত্রের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেন লেখক। আশফাক উদ্দিন; যাদের জন্যই হয়তো নেমে আসে এই অমানিশা। যার হাত থেকে রেহাই পায়নি নাসিমা। রেহাই পায়নি লাবনিও। লাবনীও গড়তে চেয়েছিল তার স্বপ্নের রঙিন ভুবন। কেমিস্ট্রি করতে চেয়ে ছিলেন বাদলের সাথে। কিন্তু পারেননি। অবশেষে ক্লান্ত কণ্ঠে বলে উঠেন:জীবনে এমন কেন?
-কেমন?
এই যে আমাদের মতন। সবকিছু পেতে ইচ্ছে হয় অথচ কিছুই পাওয়া হয়না। এই না পাওয়ার পেছনের মানুষগুলোকেই লেখক আমাদের সামনে তুলে ধরেন।
আমি মনে করি,এই ছোট্ট কলেবরে বাঁধা বইটি বর্তমান সময়ের একটি যুগোপযোগী উপন্যাস।
নাজিবুর রহমান নাজিম,
- ২য় বর্ষ (২০১৮-১৯ সেশন)
- ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট ,
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।