গত ২০ ফেব্রুয়ারি লাইব্রেরিয়ান ভয়েসের ৩য় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। ওয়েবিনারে আলোচনার বিষয় ছিল একুশ শতকের প্রেক্ষাপটে গ্রন্থাগার পেশাঃ চ্যালেঞ্জ, প্রত্যাশা ও বাস্তবতা। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. উদয়ন ভট্টাচার্য, প্রফেসর, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা; প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল, হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট, লাইব্রেরি এন্ড ইনফরমেশন সায়েন্স, ডিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়; ড. সবুজ কুমার চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কনক মনিরুল ইসলাম, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, লাইব্রেরিয়ান ভয়েস। পুরো আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন দিল আফরোজ, হেড অব গ্রাফিক্স, লাইব্রেরিয়ান ভয়েস।
আলোচনার শুরুতে ড. উদয়ন ভট্টাচার্য বলেন, গ্রন্থাগার পেশাটি শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। লাইব্রেরি নামটির সাথে অটোমেটেড, ডিজিটাল, ভার্চুয়ালের মতো ব্যাপারগুলো জুড়ে গেলেও এর পেশাগত বিষয়বস্তু সেই একই রয়ে গেছে। খুব বেশি ফিলোসফিক্যাল পরিবর্তন আসেনি। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনগুলো এই পেশায় সাময়িক চ্যালেঞ্জ হিসেবে এলেও গ্রন্থাগারিকেরা তা উতরে গেছেন। এছাড়াও কোভিড-১৯ ছিল এই পেশার একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন।
প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমাদের লাইব্রেরিগুলোতে এক ধরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমাদের লাইব্রেরিয়ানরা প্রযুক্তিগতভাবে অনেক এগিয়েছেন। কোভিড পরবর্তী অবস্থা তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ নিয়ে এসেছে।
ড. সবুজ কুমার চক্রবর্তী বলেন, টেকনোলজি ডায়নামিক্স বলে একটি শব্দ রয়েছে। এই যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এবং সেই সাথে লাইব্রেরিগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ সোসাইটাল ইন্সটিটিউট হিসেবে এই পরিবর্তনের সাথে যদি নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে না পারি তাহলে একটি ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, লাইব্রেরিকে একটি ভাইটাল অরগান হিসেবে ভাবতে হবে। এজন্য সমাজের প্রায়োরিটিকে বদলাতে হবে।
কনক মনিরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের গ্রন্থাগার বিষয়ক সমস্যাগুলো মোটামুটি একই রকম। বর্তমানে তথ্য যখন মানুষের হাতের নাগালে তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ফেইক ডাটা চিহ্নিত করা।
ড. উদয়ন ভট্টাচার্য উন্নত বিশ্বে গ্রন্থাগারিক পেশার মর্যাদার কারণ হিসেবে বলেন, সেসব দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাবলিক লাইব্রেরিগুলো খুবই ভালো সার্ভিস দিয়েছিলো। মানুষ তা মনে রেখেছে। আমাদের এখানে সমস্যাগুলো হলো পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতে দক্ষ লোকবলের অভাব এবং প্রাইভেট লাইব্রেরিগুলোতে অল্প বেতনে বেশি পরিশ্রম করানো হচ্ছে। আর একারণে এই পেশায় সমৃদ্ধি আসছে না। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সচেতনতা খুবই জরুরি। এছাড়াও আমাদের সমাজে গ্রন্থাগারকে খুব একটা গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না। এটাও একটি বড় সমস্যা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ড. সবুজ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা লাইব্রেরিকে শুধু বই দেওয়া এবং নেওয়ার জায়গা হিসেবে ভাবতে শিখেছি। কিন্তু জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে লাইব্রেরিকে প্রবেশ করানো সম্ভব আমরা তা মানতে চাই না। এসময় তিনি টরেন্টো পাবলিক লাইব্রেরির কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে এমনকি শিশুদের খেলার জায়গাও রয়েছে। শিশুরা খেলার ছলে হলেও লাইব্রেরি ব্যবহার করছে। পাঠকের ভেতর এভাবেই লাইব্রেরির প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে হবে।
কনক মনিরুল ইসলাম বই পড়ার ওপরে জোর দেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বই পড়ার অভ্যাসটা একেবারেই কমে গেছে এবং এ ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, উন্নত বিশ্বে এখনো বইয়ের ব্যবহার কমে যায়নি। এছাড়া দেশের গ্রন্থাগারগুলোর সেবাগুলো সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই ওয়াকিবহাল নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, লাইব্রেরিয়ান ভয়েস গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, গ্রন্থাগারিক, শিক্ষাবিদসহ সকলের সমস্যা, সম্ভাবনা এবং প্রত্যাশার কথাগুলো তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে।
ওয়েবিনারের শেষ দিকে সম্মানিত আলোচকবৃন্দ দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল ওয়েবেনিরের শুরুতে সংযুক্ত থাকলেও নেটওয়ার্ক বিপর্যয়জনিত কারণে পুরো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। অনুষ্ঠানটি লাইব্রেরিয়ান ভয়েসের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ এবং ইউটিউব থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। পুরো ওয়েবিনারটি পাওয়া যাবে এখানে https://tinyurl.com/np5mcayn
গ্রন্থনাঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ